Today's Quote

Only a life lived for others, is a life worthwhile
-Albert Einstein

Saturday, 13 December 2014

হযরত মুহাম্মদ (স.) কিসের তৈরি?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। মানুষ মাটি দিয়ে তৈরি, ফেরেশস্তা নূর দিয়ে এবং জিন আগুনের শিখা দিয়ে তৈরি। আমরা পাক কোরআন থেকে এ বিষয়গুলো জানি। একমাত্র মানুষ ছাড়া অন্য কারো জন্ম কিভাবে, তাদের পিতা-মাতা কারা ছিলেন ইত্যাদি বিষয়ে আমরা তেমন কিছু অবহিত নই। আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীন যখন মানব জাতিকে সৃষ্টি করার এরাদা করলেন, তখন ফেরেশতাদের সাথে পরামর্শ করলেন যে, আমি দুনিয়াতে আমার খলিফা বানাতে চাই।
ফেরেশতাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার ইবাদত করার জন্য তো আমরাই যথেষ্ট। মানুষ তৈরি করলে তারা পাপ করবে, গোণাহ করবে, আর আমরা তো নিষ্পাপ, তোমার ইবাদতের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ পাক বললেন, “আমি যা জানি তোমরা তা জান না। আদম (আ:)কে মাটি দিয়ে তৈরি করার পর সকল ফেরেশতাকে আদম (আ:)কে সিজদা করার জন্য আল্লাহ তা’আলা হুকুম করলেন। যে এ আদেশ অমান্য করল, সে শয়তান/ইবলিশ হয়ে গেল এবং মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু হল। অন্যান্য সকল ফেরেশতা, মাটির তৈরি আদম (আ:)কে, আল্লাহর হুকুমের কারণে, সিজদা করলেন। এ বিষয়ে খুবই পরিষ্কার মাটির তৈরি মানুষের মর্যাদা, স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার রহমতে, নূরের তৈরি ফেরেশতাদের চেয়ে অধিক। সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন লোক এটা পরিষ্কার বুঝতে পারে। মানুষ তৈরির রহস্য কি এখানে হয়তো আল্লাহ তা’আলা ইঙ্গিত করেছেন, রহস্য হল, মানুষের ভিতরে পাপ করার স্বভাব থাকবে, শয়তান মানুষকে কু-পরামর্শ দিয়ে বিপথে টানবে এসত্ত্বেও মানুষ পাপ করার স্বভাব, শয়তানের কু-শলা পরামর্শকে উপেক্ষা করে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করবে। তাহলে ইবাদতের উৎকর্ষতা ফুটে উঠবে। ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্যই, আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে তা ফুটে উঠবে। ফেরেশতাদের দ্বারা এটা হচ্ছে না। কারণ, ফেরেশতাদের মধ্যে পাপ করার স্বভাবই নাই। চাহিদাও নাই। তারা কোন লিঙ্গের তাও জানা যায় না। পক্ষান্তরে মানুষের ভিতরে যখন গোণাহের চাহিদা থাকবে, নফসের চাহিদা থাকবে শয়তানের প্রলোভন থাকবে এতদসত্ত্বেও সকল খারাপ চাহিদা, লোভনীয় আকর্ষণ উপেক্ষা করে আল্লাহ তা’আলার হুকুম মেনে চলবে তাতে প্রকাশ পাবে যে, মানুষ আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ইবাদত করে। আর আমার মধ্যে যদি গোণাহের চাহিদা না থাকে, শয়তানের প্রলোভন না থাকে তাহলে তো আমি ইবাদত করবই। কারণ এর বিপরীত কোন চাহিদা তো নাই। পাপের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে, দমন করে সৃষ্টিকর্তার হুকুমড মানলে তার মূল্যায়ন হবে অধিক। মাটির তৈরি মানুষের মাঝে পাপের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর ইবাদত করার মূল্য অনেক বেশি। অতএব যৌক্তিকভাবেই বুঝতে পারা যায় যে, মাটির তৈরি মানুষ, নূরের তৈরি ফেরেশতাদের চেয়েও মূল্যবান। তাই আল্লাহ তা’আলা সূরা আল বাকারার ৩০নং আয়াতে যথার্থই বলেছেন, “আমি যা জানি তোমরা তা জান না”। হযরত আদম (আ:) কে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা সব মানুষই আদম সন্তান, মাটি দিয়ে তৈরি আদম (আ:) এর সন্তান। পিতা যেখানে মাটির, সন্তান অবশ্যই মাটির। এখন প্রশ্ন হল, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) যদি মানুষ হয়ে থাকেন, তিনি অবশ্যই মানুষ আমাদের মত দেহের মানুষ, তিনি নিঃসন্দেহে মাটির মানুষ, মাটির সন্তান। নবীজী আমাদের মতই মানুষ একথা আল্লাহ পাকের পবিত্র কোরআনে সুরা আল-কাহফ এর ১১০নং আয়াতে উল্লেখ আছে। সেখানে আল্লাহ তা’আলা নবীজীকে বলেছেন, আপনি বলুন, “আমি তোমাদের মতো মানুষ বৈ কিছুই নহি, অবশ্য আমার প্রতি (আল্লাহর পক্ষে হতে) অহী অবতীর্ণ হয়।” মানুষ বলতে মাটির তৈরি মানুষ বুঝায়, নূরের তৈরি নয়। আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে সময়ে সময়ে আমাদের মধ্য হতে নবী, রাসুল মনোনীত করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “আমি তোমাদের মধ্যে তোমাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছি, যে আমার আয়াতসমূহে তোমাদের কাছে পাঠ করে। তোমাদের পবিত্র করে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষা দেয় (সূরা আল বাকারা, আয়াত : ১৫১ দেখা যেতে পারে)। রাসূলদের মাধ্যমেই আসমানী কিতাবসমূহ পৃথিবীতে নাযিল হয়েছে। সে সকল কিতাবের ধারাবাহিকতায়, সর্বশেষ আসমানী কিতাব মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআন আমাদের রাসূল (স:) এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক নাযিল করেছেন।

অন্যান্য নবী, রাসূলগণ কি নূরের তৈরি? যদি তা না হয়, তবে কেবল শেষ নবী ও রসূল (স:) কে আমরা কেহ কেহ নূরের তৈরি বলে প্রচার মাধমে তর্ক বিতর্ক করি কেন? সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষদেরকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেবার জন্যই কি আমরা এটা করি? মানুষকে বিভ্রান্ত করা ঠিক নহে। যেখানে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনের সূরা আনআম এর ২নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি (প্রত্যেকের জন্য বাঁচার একটা) সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন (তেমনি তাদের মৃত্যুর জন্যেও) তার নিকট একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে, তারপরও তোমরা সন্দেহে লিপ্ত রয়েছ। আমাদের প্রিয় নবী (স:) ও নির্দিষ্ট সময় বেঁচে ছিলেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। অতএব নবীজী মাটির মানুষ ছিলেন। একই সূরায় ৯নং আয়াতের মর্ম কথা হল আল্লাহ তা’আলা যদি কোন ফেরেশতাকেও পৃথিবীতে নবী হিসেবে পাঠাতেন তাকেওতো মানুষের আকৃতিতে পাঠাতেন। এবং তাতেও প্রমাণ হয়Ñ নবীজী মাটির তৈরি মানুষ। এক হাদীসে বর্ণিত আছে, এক সময় রাসূলুল্লাহ (স:) নামাজ আদায় করেন বর্ণনাকারী ইব্রাহীম বলেন, আমার জানা নেই, নামাজে বাড়িয়েছেন না কমিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (স:) যখন সালাম ফিরালেন তখন সাহাবাদের পক্ষ হতে বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল (সা:) নামাজের মধ্যে কিছু ঘটেছে কি না? তিনি বললেন, তা কি? সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (স:) আপনি নামাজ এরূপ এরূপ আদায় করেছেন। এ কথা শুনে তিনি সাথে সাথে পা মুড়িয়ে কেবলার দিকে মুখ করে পর পর দুটি সেজদা করে সালাম ফিরালেন। সালাম ফিরাবার পর যখন তিনি পুনরায় আমাদের দিকে মুখ করলেন, তখন ইরশাদ করলেন, নামাজের মধ্যে নতুন কিছু ঘটলে নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে সে বিষয়ে জানিয়ে দিতাম। তবে তোমরা জেনে রেখো, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। সুতরাং আমি যদি কখনো ভুল করি, তাহলে তোমরা আমাকে সে ভুল তাসবীহের মাধ্যমে তা শুধরে দিও। আমরা জানি, রাসুলুল্লাহর বক্ষ ৪ (চার) বার বিদারণ করা হয়েছে, বক্ষ পরিষ্কার করা হয়েছে। মাটির তৈরি মানুষকে সম্পূর্ণরূপে নবী/রাসুল হিসাবে নিখুঁতভাবে তৈরি করার জন্যই এসব করা হয়েছে। নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) যদি নূরের তৈরি হতেন তবে কোন যুক্তিতে তাঁর বক্ষ পরিষ্কার করা হল?

গত রমযান মাসে ‘চ্যানেল আই’ এর পর্দায় বিশেষ এক ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন বক্তার বক্তব্য শ্রবণ করলাম ও দেখলাম। তিনি আমার মনে হল স্বীয় ধর্মীয় বিদ্যা জাহির করার পাশাপাশি অন্য কারো গীবত করছেন, অন্য কাউকে গালমন্দ করছেন। এমনকি ঐ বিদ্বান ব্যক্তির বক্তব্য যদি কেহ ভুল প্রমাণ করতে পারেন তবে তিনি ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা দিবেন। অর্থাৎ তিনি বাজি ধরেছেন বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হল। এখানে আমার প্রশ্ন, পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কোরআনের কোন জায়গায় এটা উল্লেখ আছে যে, অন্যকে গালগালি করা, অন্যের গীবত গাওয়া, ধৈর্য্যহীনের মত আচরণ করা, বাজি ধরা ইত্যাদি জায়েজ? আমরা কোরআন পড়ি কিন্তু মর্মার্থ বুঝি বলে মনে হয় না। আবার যদি বুঝিও তা মানি না। বিষয়টি অতীব দুঃখজনক। যারা বলেন রাসূলুল্লাহ (স:) নূরের তৈরি এবং যেহেতু নূরের তৈরি তাঁর কোন ছায়া ছিল না।

তাদের কাছে আমার প্রশ্ন : ক. নূরের তৈরি মানুষের কি মাটির তৈরি মেয়ে মানুষের সাথে বিয়ে হয়? তা যদি হয়, তবে খ. নূরের তৈরি পিতা আর মাটির তৈরি মাতার ঘরে যে সন্তান জন্ম নেয় তারা কিসের তৈরি? নূরের না মাটির? গ. ফেরেশতাগণ নূরের তৈরি তাদের কি কোন যৌন চাহিদা আছে বিয়ে করার সাধ জাগে, ঘুম, নিদ্রা, আহার প্রজনন ইত্যাদি আছে। সাধারণ মানুষ কি তাদের দেখতে পাই। ঘ. একাধিক বার নবীজী (সা:)কে অমানুষিক অত্যাচার করে রক্তাক্ত করা হয়েছে, রক্ত ঝরানো হয়েছে। নূরের তৈরি কারো শরীর কি দেখা যায় এবং তা হতে রক্ত ঝরে? ঙ. আল্লাহ তা’আলার নির্ধারিত সময়ে নবী (সা:) এর মৃত্যু হয়েছে, দাফন, কাফন হয়েছে। সব কিছুই মাটির মানুষ হিসাবে হয়েছে। আমরা কোন নূরের তৈরি কোন ফেরেশতাকে দেখেছি। মৃত্যুর পর কবর দেয়া হয়েছে?

অনেক কিছুকেই আল্লাহ তা’আলা নূর বলেছেন। পবিত্র কোরআনকেও নূর বলেছেন। কোরআনকে নূর বলার তাৎপর্য হল, ইহার কল্যাণে মানুষ শিরক এর অন্ধকার হতে মুক্ত হয়ে হেদায়েতের আলোতে আসে। শরীর, কলব, হায়াত প্রভৃতি এর কল্যাণে আলোকিত হয়। এর কল্যাণে মানুষের সামনে সব কিছুই উদ্ভাসিত, পরিষ্কার সহজ সরল হয়ে যায়। এই কারণে পবিত্র কোরআন নূর বা আলো। এখন দেকুন, কোরআনে যা যা লিপিবদ্ধ সবই এর আভ্যন্তরীণ গুণ। বাহ্যিক আবরণের গুণ নহে। এ সমূদয় গুণ হুজুর পাক (ছ:) এর মধ্যেও বিদ্যমান, যা অস্বীকার করার উপায় নাই। নুর, শব্দ দ্বারা যদি নবীজি (স:)কে উদ্দেশ্য করা হয়, তবে সেখানেও আভ্যন্তরীণ গুণই উদ্দেশ্য হবে। কায়ার উপাদান নূরের দ্বারা ভূষিত ও অলংকৃত হয়েছে। নূর বা আলো দ্বারা যেমন দৃষ্টিগ্রাহ্য বস্তুসমূহ দেখতে সহজ হয়, তেমনি নূরে বাতেন বা আভ্যন্তরীণ ও আত্মীক আলো দ্বারা বুদ্ধিগ্রাহ্য বস্তু ও তার মৌলিকত্বসমূহ হৃদয়ঙ্গম করা সহজ হয়। নবীজী (স:) এর যে নূরের বিষয় আমরা চিন্তা করি, তা নূরে বাতেন বা আত্মার আলো, দৈহিক কোন আলো নহে। আমরা অনেকের মুখেই শুনি হযরত মুহাম্মদ (স:) এর নাকি কোন ছায়া ছিল না, কারণ, তিনি নূরের তৈরি ছিলেন বলে। আমার প্রশ্ন, তিনি কি গায়ে কোন বস্ত্র বা হিজাব পরিধান করতেন না? ঊস্ত্র কি নূরের তৈরি ছিল? আসল কথা হল, নবীজী (স:) এর খেদমতে ফেরেশতাগণ, আল্লাহর নির্দেশে, সদা নিয়োজিত। আমরা সাধারণ মানুষ ফেরেশতাকে চোখে দেখি না, কিন্তু নবীগণ দেখতেন। ফেরেশতাগণ নবীজী (স:) কে ছায়া দিয়ে রাখতেন। ফেরেশতাগণ শুধু আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ পালনকারী ও মানবজাতির সেবক। ফেরেশতাগণ নবীজী (স:)কে ছায়া দিতেন তা আমরা দখতে পেতাম না বলেই আমরা মনে করি নবীজীর কোন ছায়া ছিল না। এ ব্যাখ্যাটি এক যৌক্তিক ব্যাখ্যা। পবিত্র কোরআনকে আল্লাহ তা’আলা আলোচনা ও যুক্তি দিয়ে বিচার করতে, বুঝতে উৎসাহ দেয়। কোরআন বলছে “তুমি তোমার রবের দিকে হিকমত, সৎ উপদেশ দ্বারা আহ্বান কর এবং আলোচনা কর সদভাবে।” নবীজীর বিষয়ে যেখানেই আলোচনা হয়, দরুদ পাঠ করা হয় তা তাঁর জন্য নিয়োজিত ফেরেশতা নবীজীকে অবহিত করেন। আলোকিত মানুষ (ঊহষরমযঃবহবফ ঢ়বৎংড়হ) বলতে আমরা জ্ঞানে, গুণে আলোকিত মানুষ বুঝি, আলো দিয়ে তৈরি মানুষ বুঝি না। খৃস্টান লেখক মাইকেল এইচ হার্ট তার বই দি হান্ড্রেড’ এ একশত জন ইতিহাস বিখ্যাত ব্যক্তিকে তাঁর বিবেচনা দ্বারা তুলনা করেছেন। তার বিবেচনায়, সর্বদিকে আমাদের প্রিয় নবী (দ:) কে সবার উপরে এক নম্বর মনীষী হিসাবে গণ্য করেছেন। মহানবী (দ:) কে মানুষ হিসাবে অন্যান্য মাটির তৈরি মানুষের সাথে তুলনা করা হয়েছে, বাহ্যিক নূর দ্বারা তৈরি কোন মানুষের সাথে তুলনা করা হয় নাই। মেরাজে যাবার পথে প্রথম আকাশে যখন হযরত আদম (আ:) এর সাথে নবীজী (স:) কে জিব্রাইল (আ:) পরিচয় করিয়ে দিলেন তখন আদম (আ:)কে নবীজী (স:) এর পিতা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। মাটির মানুষের সন্তান মাটির মানুষ হয়। এ ঘটনা থেকেও প্রমাণ হয়Ñ হযরত মুহাম্মদ (সা:) মাটির মানুষ ছিলেন। এটাই যুক্তিসঙ্গত সত্য। যিনি হযরত মুহাম্মদ (সা:) নূরের তৈরি বিষয়টা প্রতিষ্ঠা করতে চান এবং প্রতিষ্ঠা করার জন্য টেলিভিশনের পর্দায় প্রতিপক্ষকে গালমন্দ করেন, তিনি পক্ষকে আজে বাজে কথা বলেন, জ্ঞানপাপি বলেন, তাদের গীবত করেন, টাকার বাজি ধরেন, ধৈর্য্যহীনভাবে অসদাচরণ প্রদর্শন করেন তার প্রতি আমার একান্ত অনুরোধ কোরআন হাদীসের নির্দেশ, উপদেশ মেনে, শালীনতা বজায় রেখে বক্তব্য পেশ করবেন। পবিত্র কোরআনের কোনো জায়গায় একথা বলা হয় নাই যে, আমরা অন্যকে গালাগালি দিতে পারব, ধৈর্য্যহীন হয়ে অসদাচরণ করতে পারব ইত্যাদি। এসবই হচ্ছে শয়তান, ইবলিশের কাজ।

আল্লাহ তা’আলার একনিষ্ঠ এবাদতকারী হওয়া সত্ত্বেও কি কারণে একজন এবাদতকারী ইবলিস হলো এ ঘটনা আমরা জানি। আমরা যতই ধর্মীয় বিষয়ে লেখাপড়া করি না কেন, বিদেশে ঘুরে ঘুরে ধর্মীয় ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করে জ্ঞান অর্জন করি না কেন ধৈর্য্যচ্যুত্যির কারণে, অসংযত আচরণের জন্য বড় ক্ষতি হতে পারে, সকল অর্জন বিফলে যেতে পারে। তাই আমাদের কথা বার্তায়, আচার আচরণে সদা সতর্ক থাকা খুবই প্রয়োজন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে কোনভাবেই অবমুল্যায়ন করা যাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা বলা যাবে না। যিনি বলবেন, তার আশ্রয় জাহান্নামে। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে সূরা আন আম-এর ২১নং আয়াতে বলেছেন, “তার চাইতে বড় অত্যাচারী আর কে আছে, যে স্বয়ং আল্লাহ পাক সম্পর্কে কোনো মিথ্যা কথা রচনা করে কিংবা তাঁর কোন আয়াতকে অস্বীকার করে, এ অত্যাচারীরা কখনো সাফল্য লাভ করতে পারে না”। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, নবীজী মাটির মানুষ, নবীজীও বলছেন, তিনি আমাদের মতই মানুষ আর আমরা কেহ কেহ বলছি নূরের তৈরি। এরকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সরবরাহকারীর বিষয়ে কি হবে তা আমি আগেই বলেছি। সূরা আন আম-এর ৫০নং আয়াতে ইহাও উল্লেখ আছে, আল্লাহ তা’আলা রাসূল (সা:)কে বলেছেন আপনি বলুন, “আমি গায়েবের কোন সংবাদ জানি না এ কথাও বলি না, আমি একজন ফেরেশতা। এ কথা ছাড়াও আরো অনেক কথা আছে তা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, হযরত মুহাম্মদ (সা:) মাটির তৈরি মহামানব, নূরের তৈরি নহে।

কুরআন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যে অর্থে নূর ব্যবহৃত হয়েছে, হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর ক্ষেত্রে সেই অর্থে হওয়াটাই যৌক্তিক। আক্ষরিক অর্থে নয়।

আমরা আমাদের কথা বার্তা, আচার আচরণে সতর্ক থাকার জন্য কোরআন, হাদিস হতে শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি ৪ (চার) ইমামদের পথ অনুসরণ করি। তাদের মধ্যে যতই মতামতের ভিন্নতা থাকুক না কেন তাদের সম্পর্ক ছিল মধুর। একে অপরের নিন্দা করেছেন বলে জানা যায় না। পরিশেষে বলি, আসুন আমরা সকলে কোরআন পড়ি, কোরআন বুঝি এবং কোরআনের আলোকে জীবন গড়ি।

লিখেছেনঃ মোজাম্মেল হোসেন খান
ঢাকা, রোববার, 22 September 2013, ৭ আশ্বিন ১৪২০, ১৫ জিলক্বদ ১৪৩৪ হিজরী

No comments: