প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিচ্ছেন এরদোগান |
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন রিসেপ তাইয়েপ এরেদাগান। তার শপথ অনুষ্টানে এশিয়া ইউরোপ ও আফ্রিকার ৯০ টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন।এরমধ্যে কাতারের আমীর ও ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন।
তিনি দেশটির ১২তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিলেন। ১০ আগস্ট অনুষ্টিত নির্বাচনে তিনি ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
১৯২৩ সালে তুর্কি প্রজাতন্ত্র যাত্রা শুরুর পর কামাল অআতাতুর্কের পর তিনি হতে যাচ্ছেন দেশটির দীর্ঘমেয়াদী শাসক। আগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটে। এ পর্যন্ত ৯ ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেয়েছে তুরস্কবাসী। এদের মধ্যে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও ইসমেত ইনুনু সর্বাধিক চারবার করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে জনগনের সরাসরি ভোটে।
২০০৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা চালু করা হয়। একই সাথে প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ সাত বছর থেকে পাঁচ বছরে কমিয়ে আনা হয়। বাড়ানো হয় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা।
নানা চরাই উতরাইয়ের মধ্যদিয়ে তিনি রাষ্ট্রের এই পর্যায়ে পৌছেছেন। লেবুর শরবত বিক্রেতা, পেশাদার ফুটবলার এবং বেসরকারি প্রতিষ্টানে কাজ করেছেন। ছিলেন ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয় মেয়র। ইসলামপন্থী রাজনীতির আদর্শ তিনি গোপন করেননি। তুর্কি সুলতানের সেনাবাহিনীর জন্য লেখা একটি কবিতা আবৃত্তি করে জেল খেটেছেন।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতেই এরদোগান জানিয়ে দেন, নির্বাচিত হলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদটিকে আলঙ্কারিক হিসেবে না রেখে ক্ষমতার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত করতে চান। ২০০৩ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর উদার ইসলামপন্থী দল হিসেবে পরিচিত একেপি তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে। আর এতে নেতৃত্ব দেন বর্তমান ৬০ বছর বয়সী এরদোগান। সমালোচকদের মতে, একেপি নেতা ক্রমেই তার কর্তৃত্ব সুসংহত করে চলেছেন এবং প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি একে চূড়ান্ত রূপ দিতে চাচ্ছেন।
রাজনীতিতে আসার আগে তিনি পেশাদার ফুটবলার এবং একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় নাজমুদ্দিন আরবাকানের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সালভেশন পার্টির (মিল্লি সালামত পার্টি) মাধ্যমে। এরদোগান ১৯৮৫ সালে রাফাহ পার্টির ইস্তাম্বুল প্রদেশের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ইস্তাম্বুল প্রদেশ থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালের ২৭ মার্চ তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে রাফাহ পার্টি সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ নির্বাচনে এরদোগান ইস্তাম্বুলের মেয়র এবং গ্রেটার মেট্রো ইস্তাম্বুল মেট্রোপলিটন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
তার জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির কারণে মেয়র হিসেবে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৯৭ সালের ১২ ডিসেম্বর দক্ষিণ তুরস্কে এক জনসভায় তুর্কি জাতীয়তাবাদী কবি জিয়া গোকাল্পের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনায় ঝড় তোলেন। কবিতাটি ছিল এ রকম Mosques are our barracks. domes our helmets, minarets our bayonets, belevers our soliders. এ কবিতা আবৃত্তির দায়ে তুর্কি সেকুলার সরকার তাকে দণ্ডিত করে। ১৯৯৭ সালে ওয়েলফেয়ার পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ দলের সদস্যরা ভার্চু পার্টি (ফজিলত পার্টি) নামে নতুন দল গড়ে তোলেন। কিন্তু ১৯৯৯ সালে এ দলকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ বছরই এরদোগানের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
২০০২ সালের নভেম্বরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বিজয়ী হয়েও আইনগত নানা প্রক্রিয়ার কারণে এরদোগানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া বিলম্বিত হয়। অবশেষে ২০০৩ সালের ১৪ মার্চ তিনি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কারণ মেয়র থাকা অবস্থায় কবিতা পড়ার কারণে তিনি শাস্তি ভোগ করছিলেন। আর এ কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে এবং বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ গুল তার আসন থেকে পদত্যাগ করলে সে আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এরদোগান। নির্বাচিত হয়ে তিনি পার্লামেন্টে আসেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আরো দুদফায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে একে পার্টি তুরস্কের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বার বার বিজয়ী হয়ে আসছে।
-দৈনিক নয়া দিগন্ত
-দৈনিক নয়া দিগন্ত
No comments:
Post a Comment