
প্রকাশনার ধরন : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত দুই ধরনের প্রকাশনা লক্ষণীয়। (ক) পাঠ্যপুস্তক ও (খ) সৃজনশীল। জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্লাসের পাঠ্যবই প্রকাশ করে থাকে। সৃজনশীল প্রকাশনা বা ক্রিয়েটিভ প্রকাশনাগুলো বিশেষ করে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ জীবনের বাস্তব ও জীবনধর্মী ঘটনাগুলো মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুটিয়ে তোলেন পাঠক সমাজের কাছে। সৃজনশীল প্রকাশনী এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা, গল্প, নাটক ও ঔপন্যাসের মাধ্যমে পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরে। এছাড়া বাংলার ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়েও রচিত হয় বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ বই।
পুঁজি ও বুক মেকিং : যে কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে পুঁজি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ন্যূনতম ৫-১০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে আপনি একটি ছোট পরিসরের প্রকাশনীর আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারেন। যা আপনি অন্যত্র কম্পিউটার কম্পোজ, প্রুফ, এডিটিং, ট্রেসিং, প্লেট মেকিং ও বাইন্ডিং করে একটি পরিপূর্ণ বই হিসেবে বিপণন করতে পারেন। এছাড়া আপনি একটি প্রকাশনা ফার্মও তৈরি করতে পারেন। যেখানে থাকবে কম্পিউটার সেকশন, রাইটার-এডিটরদের সেকশন। পর্যায়ক্রমে পুঁজি বাড়িয়ে উক্ত প্রকাশনাটি হাঁটিহাঁটি পা পা করে অনেক বড় শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।
বুক মার্কেটিং : প্রকাশক হিসেবে আপনার প্রকাশিত বইটি প্রথমে আপনার নিজস্ব লাইব্রেরিতে ডিসপ্লে করে বিক্রয় করতে পারেন। এছাড়া বিভাগীয়, জেলা, থানা পর্যায়ে প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে পাইকারি মূল্যে বিক্রয় করতে পারেন। সৃজনশীল বই প্রকাশ করলে তা আপনি একুশের বই মেলা স্টল নিতে পারেন কিংবা অন্য যে কোনো স্টলেও আপনার প্রকাশিত বই পাইকারি ও খুচরা মূল্যে বিক্রি ও ডিসপ্লে করতে পারেন।
যশ-খ্যাতি : একজন প্রকাশক হিসেবে আপনি যশ, খ্যাতি ও প্রতিপত্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন। বাংলাদেশের প্রথিতযশা দিকদর্শন প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আরসি পাল বলেন, ছাত্রজীবনেই আমি হ্যান্ডনোট লেখা শুরু করি। পরে তা প্রকাশনী আকারে রূপ দেই। দিন-রাত পরিশ্রম করে একাধিক প্রকাশনীর মালিক হয়েছি। কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে আমি পেয়েছি অভিনন্দন ও ভালোবাসা। সেই সাথে আর্থিকভাবেও হয়েছি লাভবান। আজিজিয়া বুক ডিপোর স্বত্বাধিকারী আলহাজ একরাম উল্লাহ দুলাল বলেন, প্রকাশনী দাঁড় করাতে প্রথমেই আমি ঝুঁকি নিয়েছি। ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্রকাশনা কাজে হাত দেই, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমি বর্তমানে বেশ ভালো অবস্থানে আছি। ঢাকা মহানগরীতে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছি। তার জন্য আমি দিন-রাত পরিশ্রম করেছি। এখন আমি স্বাবলম্বী হিসেবে দেশের একজন শিল্পপতি। এভাবে প্রকাশনা জগতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তরুণ ইঞ্জিনিয়ার মেহেদি হাসান, যিনি লেকচার পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী ম্যানেজিং ডিরেক্টর। প্রকাশনা শিল্পে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন জুপিটার পাবলিকেশন্সের কায়সার ই-আলম প্রধান। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি। বাংলাদেশে বেকারত্ব দূরীকরণে প্রকাশনা শিল্প একটি মাইলফলক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এ পেশায় শিক্ষকদের পাশাপাশি কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা সম্পৃক্ত হয়ে রাইটিং, এডিটিং করে অর্থাৎ পার্টটাইম জব করে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জব করার জন্য প্রতিটি প্রকাশনীতেই শিফটিং সিস্টেম চালু আছে। এ সম্পর্কে এমবিএ’র ২য় বর্ষের ছাত্রী রেহেনা রহমান বলেন, আমি এইচএসসি পরীক্ষার পর পরই দুই মাস একটি প্রকাশনীতে দৈনিক ৪-৫ ঘণ্টা লেখালেখি করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করেছি। একই সাথে ভার্সিটির ভর্তি কোচিংয়ের প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রকাশনা শিল্প আমার পরিবারের দারিদ্র্য বিমোচনেও সহায়ক হয়েছে। বুয়েট শেষ বর্ষের ছাত্রী রিভা নাজরীন বলেন, বর্তমানে একটি প্রকাশনীতে হোম রাইটার হিসেবে জব করছি, তাতে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা অনায়সে অর্জন করতে পারছি। স্টুডেন্ট হিসেবে এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। প্রকাশনা একটি সৃজনশীল কাজ। আপনিও হতে পারেন একজন প্রকাশক। এতে করে এ শিল্প বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উন্নতি ও বিকাশ ঘটাতে আপনিও নিজেকে সম্পৃক্ত করে জাতি গঠনে এগিয়ে আসতে পারেন।
তামান্না তানভী : দৈনিক ইনকিলাব
No comments:
Post a Comment